চোর এসে একটা লোকের কাছ থেকে ২০০ টাকা চুরি করল। চুরি করেই ধরা পড়ে গেল। লোকটা হইচই বাধিয়ে দিল। চোর কিছুতেই টাকা ফেরত দেবেনা। এই গাজোয়ারি দেখে চোরের বিরুদ্ধে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেল। দেশে তখন “টু মাচ গণতন্ত্র"। চোরের থেকে টাকা আদায়ের জন্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন শুরু হল। তবু টাকা ফেরত দেয়না চোর। মানুষও নাছোড়বান্দা। টাকা ফেরত দিতেই হবে।

টু মাচ গণতন্ত্র। চোর বলল, ঠিক আছে, আসুন আমরা মিটিং করে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলি। মানুষ বলল, চলুন তবে। এরপর সিটিং আর মিটিং হয়েই যাচ্ছে। সুরাহা হচ্ছেনা। দিনের পর দিন মাসের পর মাস কেটে গেল। চোরের ওপর চাপ বাড়তে লাগল। টু মাচ গণতন্ত্র বলে চোরটার গায়ে শুধু কেউ হাত তোলেনি।

আবার হইচই শুরু। টাকা ফেরত চাই। চোর এবার বলল, ঠিক আছে। আমি দু’টাকা ফেরত দিতে পারি। এর চেয়ে বেশি ফেরত দেওয়া যাবেনা। নিতে হলে নিন নইলে আসতে পারেন। আবার হইচই। এবার টাকাপয়সার আওয়াজ শুনে বেশ কয়েকজন স্ট্রিঞ্জার, রিপোর্টার, সাংবাদিক ও জার্নালিস্ট হাজির। একে ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করল। ব্যাপারটা কি! নিজেদের নাক ও কানের সামর্থ্য অনুযায়ী লোকের মুখ শুঁকতে শুরু করল। মগজ অনুযায়ী ওরা নিজেদের মত করে বুঝল। তারপর চোখ খুলে চলে গেল।

পরের দিন টিভি আর খবরের কাগজে দেখি রকমারি খবর। বেশ কয়েকটা টিভি চ্যানেলে বলতে দেখলাম, চোরটা নমনীয় হলেও মানুষ গোঁ ধরে বসে আছে। কয়েকজন বলল, এর পেছনে কেউ না কেউ আছেই। কেউ বলল নারদ মুনির গুষ্টি এর পেছনে আছে। কেউ বলল, যে সব মানুষ এসেছে তারা জানেইনা চোর কত টাকা চুরি করেছে। চুরির পরিমাণ না জেনেই টাকা ফেরত চাইতে চলে এসেছে। টু মাচ গণতন্ত্র তো। সবাই সব কিছু বলার অধিকার পেয়েছে। খবরে বলল, চোর বলছে দু’টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। এটাই চোরের মহত্ত্ব। কিন্তু মানুষ বুঝতে চাইছেনা। এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে! ওরা দু’শো টাকা ফেরতের দাবিতে ইচ্ছে করেই চোরের পেছনে পড়ে গেছে।

কানাঘুষোয় শোনা গেল, চোর নাকি কোন এক রঘু ডাকাতের জন্যেই চুরি করেছে। নিজের জন্যে নয়। কি মহৎ চোর! আপাতত সংবাধমাধ্যমগুলো চুরির দু’শো টাকা ভুলে চোরের দু’টাকা ফেরত দেওয়ার গল্পে মশগুল!