মোল্লার পাগড়ি গোসল

একবার মোল্লা চারদিকে তাপ্পি মারা খুব নোংরা একটা পাগড়ি পরে একটা সরাইয়ে ঢুকেছেন স্নান করতে। বেয়ারা মোল্লাকে নোংরা একটা তোয়ালে আর পচা তেল সাবান দিয়ে ঝুল ধরা পুরোন একটা স্নানঘর দেখিয়ে দিলেন। মোল্লা স্নান করে বেরিয়ে বেয়ারা একটু বেশি বকশিস দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

পরের দিন মোল্লা আবার সেই স্নানঘরে গেলেন স্নান সারতে। এবার নতুন ধোপদুরস্ত কাপড়চোপড়। তার সঙ্গে সুগন্ধি মাখানো পাগড়ি বিশাল মাপের এক পাগড়ি মাথায়।  মোল্লাকে দেখেই এবার বেয়ার লম্বা সেলাম ঠুকে নতুন তোয়ালে, দামী আতর সাবান ইত্যাদি দিয়ে ঝকঝকে একটা স্নানঘরে ঢুকিয়ে দিলেন। মোল্লা নিরাপদে গোসল করে আতর মেখে বেরিয়ে এসে বেয়ারাকে ডাকলেন। বেয়ার আবার সেলাম ঠুকে দাঁড়াল। এবার পকেট থেকে একটা ফুটো পয়সা বের করে বেয়ারার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এই নাও, কালকেরটা আজকে দিলাম, আজকেরটা কালকেই দিয়ে দিয়েছি।

মোল্লার পাগড়ি

মোল্লার একদিন বড় পাগড়ি পরার শখ হল। যেমনি কথা তেমনি কাজ। মোল্লা পেল্লাই এক ঝুড়ির মতো পাগড়ি মাথায় দিয়ে রাস্তায় বেরোলেন। অতবড় পাগড়ি মাথায় এক লোককে দেখে এক পথচারী হাতে মোড়া একটা চিঠি নিয়ে কাকতি মিনতি করে বলল, হুজুর, আমার এই চিঠিটা পড়ে দিন।

মোল্লা বললেন, আমি মূর্খ। আমি নিরক্ষর। আমি তোমার চিঠি পড়তে পারবনা।

পথচারী ততধিক বিনয়ের সঙ্গে বলল, আপনি খুবই বিনয়ী হুজুর। এত বড় পাগড়ি! আর বলছেন আপনি পড়তে পারেননা! আপনি পন্ডিত নন। আপনি বিনয়ের অবতার।

মোল্লা সঙ্গে সঙ্গে নিজের মাথার পাগড়িটা লোকটার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বললেন, ঠিক আছে, পাগড়ির যদি অক্ষর জ্ঞান থাকে তবে এবার তুমিই নিজের চিঠি পড়ে ফেলতে পারবে।

মোল্লার পাগড়ি বিভ্রাট

একবার একজন লোক মোল্লার কাছে একটা চিঠি নিয়ে এসে পড়ে দেওয়ার অনুরোধ করল। মোল্লা পড়ার চেষ্টা করে বিফল হয়ে বলল, “লেখাটা দুষ্পাঠ্য তাই পড়া যাইতেছেনা।”

লোকটা খেপে গিয়ে বলল, “একটা সাধারণ চিঠি পড়তে পারো না আবার মাথায় পাগড়ি পর”। 

মোল্লা তাড়াতাড়ি নিজের পাগড়ি খুলে লোকটার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলল, “এই যে ভায়া, এখন তোমার মাথায় পাগড়ি আছে, এইবার তুমি দেখো তো চিঠিটা পড়তে পারছ কিনা?”

মোল্লার পাগড়ির দাম

নাসিরুদ্দিন একদিন মাথায় এক বিচিত্র বাহারের বিশাল পাগড়ি পরে বাদশাহর দরবারে গিয়ে হাজির হলেন।

বাদশাহ মোল্লাকে দেখেই হাসতে হাসতে প্রশ্ন করলেন, “তোমার ওই আশ্চর্য পাগড়িটা কত দিয়ে কিনলে মোল্লা।”

“এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা, শাহেনশাহ।” 

বিদঘুটে পাগড়ির এত দাম শুনে এক উজির বাদশাহর কানে কানে ফিসফিস করে বললেন, “মূর্খ না হলে কেউ ওই পাগড়ি অত দাম দিয়ে কিনতে পারে জাঁহাপনা! মোল্লা তো দেখছি একেবারে আকাট মূর্খ হুজুর।”

ওর কথায় কান না দিয়ে বাদশাহ মোল্লাকে বললেন, “অত দাম কেন? একটা পাগড়ির জন্য এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা আমার কাছে অবিশ্বাস্য বলেই মনে হচ্ছে।”

“ভালো লাগাটাই বড়, মূল্যের ব্যাপারটা যারা রসিক তাঁদের কাছে কিছুই না জাঁহাপনা। আর আমি ভালোভাবে জানি, দুনিয়ার কেবল একজন সমঝদার বাদশাহই আছেন, যিনি এই পাগড়ি চিনতে পেরেছেন। আমি জানি এই দুনিয়ায় একমাত্র দিলদার বাদশাহ আছেন যিনি ন্যায্য দাম দিয়ে এই শখের পাগড়ি কিনতে পারেন। আপনি ছাড়া কার এমন দিল আছে, জাঁহাপনা?” 

তোষামোদে খুশি হয়ে বাদশাহ তৎক্ষণাৎ মোল্লাকে দুহাজার স্বর্ণমুদ্রার একটা থলি ধরিয়ে নিজেই সেই পাগড়িটা কিনে নিলেন মোল্লা সাহেবের কাছ থেকে। 

আড়ালে গিয়ে উজিরকে ডেকে মোল্লা বললেন, “উজির সাহেব, আপনি হয়তো পাগড়ির মূল্ল্যটা বুঝেছিলেন কিন্তু আমার মূল্যটা বোঝেননি। আমার দাম আপনার আগেই জেনে রাখা উচিত ছিল।"