নির্বাচন উৎসবে ঘুরতে এসে আমি তৃপ্তি পেলাম। পুরো দেশ জুড়ে এখন উৎসবের আবহাওয়া। মানুষের জন্যে কাজ করার জন্যে দোকান সাজানো হয়েছে। সেলিব্রিটিরা মাঠে নেমেছে। ওরা রাজনীতির ময়দানে নেমে যাওয়ার ফলে উৎসবের মধ্যে বিনে পয়সায় সেলিব্রিটি দেখার সুযোগ মানুষের কাছে এসে গেল। দুয়ারে সেলিব্রিটি এসে ভাতের মাড় গেলে দিয়ে গেলেন। গামছা কেচে দিয়ে গেলেন। সাংবাদিকরা তৎপর ছিলেন। পটাপট ফটো। ঝটাঝট ভিডিও। ছড়িয়ে গেল গোটা দেশে। মানুষের ঘরে পাত পেড়ে বসে মধ্যাহ্ন ভোজন করার আবেগতাড়িত তাবড় নেতা মন্ত্রীরা সক্রিয় হয়েছেন। এক নেতা মানুষের ঘরে বসে মাছ ভাজছেন। আরেকজন ডাল রাঁধছেন। কেউ চা আর চপ বানাচ্ছেন। খই ভাজার আয়োজন। কেউ লাউ কাটছেন। কেউ কোথাও গম কাটছেন। কেউ চাকা সারাচ্ছেন। কেউ নাচছেন। কেউ গাইছেন। কেউ ধোঁয়া ছড়াচ্ছেন। সবাই মানুষের জন্যে কাজ করায় ব্যস্ত। উৎসব চলছে। আমাদের দেশের নির্বাচন উৎসবের আবহাওয়া আমাকে তৃপ্তি দেয়।

খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটাও দায়িত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। খিচুড়ি আছে। মাংস ভাত আর ডিম্ভাত আছে। ক্যাশ আছে। বেলের রস টু সোমরস। এসবও আছে। হাজার হাজার মানুষ এইসব খেয়ে ঢেকুর তুলছে। এই ঢেকুরের গন্ধে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ গন্ধিত। গোরু, বালি, চাঁদা, বন্ড, টেন্ডার, কয়লা, ডিম্ভাত, চপ, মুড়ি – এসব খাওয়া দাওয়া চলছে। উৎসবের দিনে মানুষ আনন্দে আত্মহারা। এঁটো হাতেই ভোট দিতে চলে গেল। ভোট দেওয়া মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতন্ত্র রক্ষা করতে গেলে ভোট দেওয়া কর্তব্য। মানুষের বাঁ হাতে পাঁপড় ভাজা। ডান হাতে এক খাবলা খিচুড়ি। হাত চাঁটতে চাঁটতে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে এক মানুষ আরেক মানুষকে জিজ্ঞেস করছে, আবার কবে ভোট হবে দাদা! এই রকম সুস্বাদু রান্না অনেকদিন খাইনি। মানুষের কাছে নির্বাচন উৎসব মানে গণতন্ত্রের পুজো উপলক্ষ্যে পেট পুজো করা। মানুষ এই দিনটার জন্যে পেটে গামছা বেঁধে বসে থাকে। তাই নির্বাচন উৎসবে এসে খানাপিনা আয়োজন দেখেও আমি খুব তৃপ্তি পেলাম।

নির্বাচন উৎসব শেষ হলে ভাঙা হাটে বসে নেতা কেনার মেলা। মানুষ এখন চোখ ঠিকরে টিভি দেখছে। ক্রিকেট খেলার মতো সাসপেন্স। লাস্ট ওভার পর্যন্ত না গেলে বোঝা যাবেনা কি হতে চলেছে। এইরকম টানটান উত্তেজনার মধ্যে মানুষ এবার চায়ের দোকান থেকে শপিং মল পর্যন্ত সবখানেই নেতা কেনার গল্পে মশগুল। ভাঙাহাটে এই কেনাবেচা দেখার আনন্দটাই আলাদা। নির্বাচন শেষ। উৎসব শেষ। খিচুড়ি শেষ। উৎসব মুখর মানুষের এবার ঘরে ফেরার পালা। ঘরে এসে ঘানি টানার পালা। আগামি নির্বাচন উৎসব পর্যন্ত অপেক্ষা করার পালা।