পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত 'কবি তাবি তান'-এর 'হাম্বা' কবিতাটি একটি ডিজিটাল কবিতা। কল্পনার সঙ্গে মোবাইলের লিঙ্ক মেরে দিলেন। আঙুল নিজে নিজেই গড়গড়িয়ে খটাখট লিখে যাবে। এই কবিতার পটভূমি গ্রামবাংলা। ওখানে এখন সর্ষে ফুল। বুম্বা বলে যে ছেলেটাকে মা ডাকছেন লোকে বলছে সেই ছেলেটা নাকি রাগ করে গোয়ালের চৌকাঠে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আকাশে মেঘ করেছে। অম্বা গর্জন করছে। গরুগুলো সব হাম্বা হাম্বা করতে করতে বুম্বাকে মাড়িয়ে গোয়ালে ঢুকছে। মায়ের স্নেহের ডাক শুনেও বুম্বা চৌকাঠে শুয়ে আছে। বুম্বা রাগ করেছে।

এটি একটি রাজনৈতিক কবিতাও বলা চলে। এই কবিতায় গরুর প্রসঙ্গ এসেছে। গরু একটি রাজনৈতিক প্রাণি। রাজনীতিতে গরু এখন ট্রেন্ড করছে। বাঘকে চেয়ার থেকে নামিয়ে গরুকে যে কোনদিন জাতীয় পশু ঘোষণা করে ফেলতে পারে সরকার। এই প্রেক্ষিতে কবি লিখছেন, 'গরু ডাকে হাম্বা'। এর ফলে গরুর হাম্বা ডাকের ভেতরে সারা ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক ভিউটা আপনি জুম করে নিতে পারছেন। কবির হাম্বা হাম্বার মধ্যে ভারতের রাজনৈতিক চিত্র ফুটে উঠেছে। কবি যে গরুকে দিয়ে অমন সুন্দর একটি হাম্বা ডাক ডাকিয়ে নিলেন তা কল্পনাতীত। এইখানেই কবির সাফল্য।

পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি হাম্বা ডাকের গভীরে ঢুকে কবিতার থিমটা ধরে ফেলেছে। বাংলা সাহিত্যে এত সুন্দর সৃষ্টি কেউ কোনদিন দেখেনি। তাই বই 'কবি তাবি তান'কে পুরস্কৃত করা হল। কবিতার মাধ্যমে গরু আর গোয়ালের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে কবি এখানে সমস্ত রাজনৈতিক বিরোধিতার জবাব হাম্বা ডাকের মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছেন।

এই কবিতায় তিনি তাঁর স্বভাবজাত স্বদেশী মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। তিনি কবিতার ছন্দ মেলাতে মাম্বা সাম্বা রাম্বা এইসব শব্দ প্রয়োগ থেকে বিরত থেকেছেন। কারণ এগুলো বিদেশী শব্দ। অথচ হাম্বা একটি আদি শব্দ। বেদের আমলেও গরু হাম্বা বলে ডাকত। এখনো ডাকে। এই ধরণের আদি অকৃত্রিম হাম্বা ডেকে কবি পাঠকদের দেশাত্মবোধের তলায় একটু চুলকে দিতে পেরেছেন। এটি একটি দেশাত্মবোধক সৃষ্টি।

কবিতার সারমর্ম না বুঝেই তাই অনেকে আলফাল বকছেন। তিনি হাম্বা বলে কেন ডাকলেন এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে। উন্নাসিক সাহিত্যিকরা তাচ্ছিল্য করছেন। বাজারে মিম ছড়িয়েছে -- "গীতবিতানের দাম ৬৮৮ টাকা, আর 'কবি তাবি তান'এর দাম ১২৪০ টাকা!" তিনি হাম্বা ডেকে এইসব কিছুর জবাব আগেই দিয়ে রেখেছেন।