ছবিটাতে কি শুধু একটা চায়ের দোকান দেখা যাচ্ছে? গুজরাটের এক অজানা স্টেশনের পুরোন একটা চায়ের দোকান! বাবাকে চায়ের দোকানে সাহায্য করতেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীকালে চায়ের দোকান নিজেই চালনা করতেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্ম ১৯৫০ সালে। আট বছর (১৯৫৯ সাল) বয়সে তিনি আরএসএস-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে যান। স্কুলের গন্ডি পার করতেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। প্রতিবাদে তিনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। দু’বছর তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। তিনি একুশ বছর (১৯৭১ সাল) বয়সে পুরোপুরি আরএসএস-এর হোলটাইমার হয়ে যান। তাহলে চা বেচার সময় তাঁর খুবই স্বল্প। হতে পারে ১৯৬৯ সালে বিয়ের পরে বাড়ি ছেড়ে বেরোনর আগে পর্যন্ত তিনি চা বেচেছেন।

আমার কথা অন্য। তিনি চা বিক্রি করেছেন কি করেননি তা নয়। তিনি বিয়ে করেছেন কি করেননি তাও নয়। আমার নজর এই চায়ের দোকানের ওপর। চায়ের দোকানের মধ্যে ভারত দেখছি তো। ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত বছর দশেক বাদ দিলে মোটামুটি কংগ্রেস সরকারই ভারতের রেলমন্ত্রক সামলেছে। আর তার সঙ্গে রেলস্টেশনের এই চায়ের দোকানকেও সামলে রাখতে হয়েছে কংগ্রেস দলটাকে। ওরা জানত যে একদিন এই চায়ের দোকানের মালিক আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। কংগ্রেসের এই দূরদর্শিতাকে আমার সাধুবাদ।

যদিও কংগ্রেসকে সাধুবাদ জানানো আমার উদ্দেশ্য নয়। কংগ্রেস আমলে আমিও কংগ্রেসের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে অনেক লড়াই লড়েছি। শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে যেভাবে ছিনিমিনি খেলত কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রতিটা ধর্মঘটে সক্রিয় থেকেছি। কর্পোরেটদের যেভাবে সুবিধা দিত কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে গলার স্বর চড়িয়েছি। কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাতের মুঠো উঁচুতে ছুঁড়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যূত করতে আহ্বান জানিয়েছি। কংগ্রেস সরেছে। তবে চায়ের দোকানটা রেখে গেছে। দোকানের মধ্যে ভারতকে ঢুকিয়ে রেখে গেছে। ঝরঝরে রংচটা চায়ের দোকানের মধ্যে এখন আমি ‘নঈ ভারত’ দেখছি। একটা বাস্তব অনুভূতি হচ্ছে।

ঠিক চায়ের দোকানটার মতোই ঝরঝরে অবস্থা পাল্টানোর পরিকল্পনা নেই। শ্রমিকদের আইনি অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কর্মহীন আগেও হত। এখন কর্মহানির সংখ্যা আরও বেড়েছে। বেকার বেড়েছে। বেড়েছে বেগারি। চাষীরা ফসলের দাম আগেও পেতনা। এখনো পাচ্ছেনা। অর্থনৈতিক বৈষম্য আগেকার মতোই বেড়ে চলেছে। বাস্তবে দোকানটা ঝরঝরে থেকেই গেছে। দোকানের কাঠামোর ওপর পচা টিনে পেরেক ঠোকা। ঠিক যেন মনে হচ্ছে ভারতের প্রগতির পরিকাঠামোর ওপর পুরোনো জং ধরা সিদ্ধান্তের ঘেরাটোপ। সবকিছুই পেরেক দিয়ে ঠোকা! কিন্তু চারপাশ পরিষ্কার ঝকঝকে! মনে হচ্ছে বাকি পৃথিবীটা অনেকটা এগিয়ে গেছে।

এই চায়ের দোকান দেখলেই আমার কংগ্রেসের কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে। কংগ্রেস তার জনবিরোধী নীতিগুলোকে চায়ের দোকানের তাকে সাজিয়ে রেখেছে। সেগুলো ব্যবহার করছে এই সরকার। মাকড়সার জালের মধ্যে দুর্নীতির বাসা। জাল বেড়েই চলেছে। আমি তো দোকানের মধ্যেই ভারতের বাস্তবিক ছবি দেখতে পাচ্ছি। দোকানের ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই অন্ধকার ঠেলে ভারতকে ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছিনা যে! ভিতটা আলগা আর নড়বড়ে লাগছে। ভারতের ভবিষ্যতের মতো লাগছে কি! বর্তমান সরকার কিন্তু দোকানের আমূল পরিবর্তন চাইছেনা। তালিতুপ্পি মারা ভারত তাদের সম্বল মনে হচ্ছে। পাল্টানোর লক্ষ্য নেই। চায়ের দোকানটার মধ্যে কি আমি এক কাল্পনিক ভারত দেখতে পাচ্ছি! নাকি বাস্তবের ভারত দেখছি? কি জানি!