পুরোন চশমাটা বাতিল করে নতুন একটা চশমা কিনেছি। এই চশমায় আমি এখন সবকিছু পজিটিভ দেখতে পাচ্ছি। আমি পজিটিভ হয়ে গেছি তারপর থেকে। গাড়ি শিল্পের মন্দার খবর আর আমি নেগেটিভ ভাবে মেনে নিতে পারছিনা। এর মধ্যেও একটা পজিটিভ দিক খুঁজে পাচ্ছি। শুনছি গাড়ি শিল্পের এবং তার অনুসারী শিল্পে মন্দার প্রভাবে ১০-১৫ লাখ লোক কর্মহীন হতে চলেছে।

এই খবরটা মোটেই দেশের প্রেক্ষিতে নেগেটিভ খবর নয়। এটা একটা পজিটিভ খবর। লোকে চাকরিহীন হলে তাদের হাতে কাজ থাকবেনা। এবং কাজ না থাকলে অনেকটা সময় বাঁচানো যাবে। যার ফলে দেশ নিয়ে চিন্তা করার জন্যে অনেকটা সময় পেয়ে যাবে লোকগুলো। তার ফলে দেশপ্রেম বাড়বে। দেশভক্তি বাড়বে। আমাদের দেশ এর ফলে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যত বেশি দেশপ্রেমিক আমরা তৈরি করতে পারব, দেশ তত বেশি সুরক্ষিত হয়ে যাবে। তাছাড়া গাড়ি কম বিক্রি হলে পেট্রোল খরচ কমবে। আদতে পরিবেশটা দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। তাই গাড়ি কারখানার মন্দা আমার কাছে একটা পজিটিভ বার্তা বহন করছে বইকি।

নাকের ওপর চশমা গলিয়ে ইন্টারনেট সার্ফ করছিলাম। সব খবরই এবারে পজিটিভ মনে হচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে নেগেটিভ খবর তৈরি করছে অনেক দেশি ও বিদেশি সংবাদমাধ্যম। ওদের খবরের মধ্যে আমি পজিটিভিটি খুঁজতে গিয়ে বুঝলাম আসলে আমাদের দেশের উন্নতিকে অনেকে ভয় পেয়ে যাচ্ছে। তাই যাচ্ছেতাই লিখে যাচ্ছে। দেশদ্রোহীরাই এমন করছে। চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে আদতে আমরা দেশপ্রেমিকের সংখ্যা বাড়াচ্ছি তা অনেকের সহ্য হচ্ছেনা। ভারতে যদি এইভাবে তিরিশ কোটি দেশপ্রেমিক তৈরি করে ফেলা যায়, তবে আমাদের দেশটাও শক্তিশালী হয়ে যাবে। পাকিস্তানকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারব। চীনের বুকে চিনচিনে ব্যথা উঠবে। আমেরিকা চোখ টেরিয়ে আমাদের উন্নতি দেখবে। এই সুখের দিন কর্মহীন না হলে দেখার সময় কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন!

সংবাদমাধ্যমে অর্থনৈতিক মন্দার খবর নেই। বন্যার্তদের খবর নেই। পরিবেশ দূষণ ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর খবর নেই। ক্ষুধার্তদের খবর নেই। দারিদ্র্যের খবর নেই। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খবর নেই। শিক্ষা সংক্রান্ত খবর নেই। ভবিষ্যতের খবর নেই। চশমা দিয়ে এরও একটা পজিটিভ দিক দেখতে পেলাম। এতগুলো নেগেটিভ দিক যদি আমরা আমাদের সংবাদমাধ্যমে দেখাই বা ছাপাই তবে তা তো বিদেশিরাও দেখতে পাবে। তাতে দেশের সম্মানটা কোথায় দাঁড়াবে কেউ চিন্তা করেছে কি! তাই দেশের সমস্যার ব্যাপারগুলো নিয়ে বেশি চর্চা না করাই ভাল। এর ফলে বিদেশিরা প্যাঁক দেবে। দেশপ্রেমিকদের মনোবল কমে যেতে পারে। একবার যদি দেশপ্রেমিকদের মনোবল কমে যায় তবে তো দেশটাই দুর্বল হয়ে যাবে। তারমানে চীন আবার শক্তি দেখাবে। পাকিস্তান চোখ রাঙাবে। তার চেয়ে পাকিস্তানকে সারা বছর চোখ রাঙিয়ে যাই আমরা। ক্ষতি কি!

চশমাটা কিনে আমার দারুণ আনন্দ এখন। চোর দেখলেই তার মধ্যে ভবিষ্যতের নেতা খুঁজে পাচ্ছি। ডাকাত দেখলে বাল্মীকি দেখছি। পকেটমারকে ব্যাঙ্ক ভাবছি। কান্নার আওয়াজের মধ্যে তানপুরার তাল শুনছি। চোখের জলে মুক্তো ঝরতে দেখছি। এখন আর দড়ি দেখলে সাপ ভাবছিনা। বরং সাপ দেখলে ব্যাপারটাকে পজিটিভ করে নিয়ে একটা নিপাট দড়ি ভাবছি। ঘর পোড়া গরুর মতো সিঁদুরে মেঘ দেখে আর আগুন ভাবছিনা। ব্যাপারটাকে উলটে দিয়ে পজিটিভ চশমা পরে গনগনে আগুন দেখে এখন আমি দেশভক্তির তুলি দিয়ে শান্ত ও স্নিগ্ধ সিঁদুরে মেঘের ছবি আঁকছি। ক্ষুধার্ত হাড় জিরজিরে শরীরগুলোর মধ্যে আমি এখন ডায়েট কন্ট্রোলড ফিগার দেখছি।