ভাল রাঁধুনি যেমন রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে নতুন নতুন পদ তৈরি করে। এরকম আমি অনেক দেখেছি। আমাদের রাঁচি রেস্ট হাউসের সীতারামদার চাউমিন একটা এক্সপেরিমেন্টাল ফুড। চাউ ফুটিয়ে তারমধ্যে লম্বা লম্বা আলু কুচিয়ে সেদ্ধ করে ভাজতেন সেই দাদা। আলাদা করে ডিমের স্ক্র্যাম্বল মিশিয়ে ওপর থেকে একটু গোলমরিচ ছিটিয়ে দিয়ে তিনি এক অমৃত বানাতে জানতেন। সীতারামদার মেজাজ ভাল থাকলে কোনদিন তাতে একটু হলুদ মিশিয়ে দিতেন। সেই স্বাদ আমি এখনো ভুলতে পারিনি। হাজার চেষ্টা করেও ওইরকম স্পেশাল চাউমিন আমি বানাতে পারিনি। 

আমাদের ভিটে গ্রামে শান্তিগোপালের একটা ফাস্ট ফুড-এর দোকান আছে। দোকানে সন্ধ্যে থেকেই লাইন পড়ে যায়। শনি মঙ্গলবার ছাড়া রোজ এগরোল পাওয়া যায়। বুধবার মাংসের বিরিয়ানি পাবেন। বাকি দিন ভেজরোল খেতে পারেন। লুচি আলুর দম পেতে পারেন। ঝালমুড়িও পাবেন। ওই দোকানে আমি একবার এগরোল খেতে গেছি। আমাকে দেখে শান্তিদা খুব খুশি। স্বপনকে সরিয়ে নিজেই এগরোল বানাতে শুরু করলেন। পেঁয়াজের সঙ্গে শসা আর বরবটি মিশিয়ে লম্বা করে বিছিয়ে দিলেন ডিমভাজা মাখা রুটিটার ওপর। শেষে রোল করার আগে দু’চারটে বাদামভাজা ভেঙে ছড়িয়ে দিয়ে তার ওপর কাসুন্দি আর একটু লঙ্কা গুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়ে রোলটা খবরের কাগজে মুড়ে আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “এটা আমার স্পেশাল ভাই”। সেই জিনিস আমি খেয়ে তার টেস্ট আজও ভুলিনি। 

কিউল পাটনা ট্রেন লাইনে ঝালমুড়ির হকাররাও এক্সপেরিমেন্ট করেন। মাঝে মাঝে পেঁয়াজের দাম অগ্নিমূল্য হয়ে যায়। তখন পাঁচটাকার ঝালমুড়িতে কেউ আর পেঁয়াজ দিতে পারেনা। শীতকালে দাম বাড়লে মুলো দিয়ে কাজ চালায়। আর গরমকালে লাঊয়ের কুচি। তাতে একটু বেশি গুঁড়ো লঙ্কা আর লেবুর রস গেলে দিলে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে কাঁচা লাউ আপনি চিবোচ্ছেন। 

দেওঘরে অবন্তিকা নামের একটা মিষ্টির দোকান ছিল। ছোটবেলা বাবার হাত ধরে সেই দোকানে যেতাম কচুরি খেতে। তার সঙ্গে হিং দেওয়া আলুর তরকারির স্বাদই মনে হয়ে বাবাকে টানত সেই দোকানের দিকে। বড় হয়ে আমিও আমার ছেলের হাত ধরে টানতে টানতে সেই দোকানে কচুরি খেয়েছি। তবে তরকারিতে আলু দেখিনি। লাউয়ের ঝোল দিয়ে কচুরি খেয়ে আর কোনদিন ওই দোকানমুখো হইনি। 

আমাদের প্রধানমন্ত্রী একবার নেমন্তন্ন খেতে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। নওয়াজ শরীফের নাতনির বিয়ে ছিল। সেখানে নাকি উনি বিরিয়ানি খেয়েছেন। এইরকম চর্চা নিন্দুকদের মুখে শোনা যায়। বিরিয়ানি আবার মাংস ছাড়া হয়না। যেমন আলুপোস্ত আলু ছাড়া হবেনা। আমার মনে হয় উনি বেগুনের বিরিয়ানি খেয়েছিলেন। হয়তো তাতে দু’চার টুকরো এঁচোড় ছিল। পেঁয়াজের বদলে লাউকুচি বা মুলোকুচি থাকাও অসম্ভব নয়। দানাকয়েক ভাজা বাদামও হয়তো ছিল। পাকিস্তানের কোন বাবুর্চি নিশ্চয়ই এইরকম একটা এক্সপেরিমেন্টাল পদ আমাদের অ্যাক্সিডেন্টাল প্রধানমন্ত্রীর পাতে পরিবেশন করেছিলেন। নতুন নতুন পদ নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা তো কম নয়।