গুজরাটের চারজন কৃষক পেপসি কোম্পানি রেজিস্টার্ড বা পেটেন্ট করা এক ধরণের আলু চাষ করেছে। এই খবর জানতে পেরে পেপসি আহমেদাবাদের কোর্টে মামলা করেছে। মামলা ওরা তুলে নেবে যদি ওই চাষীরা ওই বিশেষ জাতের আলু না চাষ করার লিখিত মুচলেকা দেয় আর উৎপাদিত আলু নষ্ট করে দেয়। এবং যদি এই আলু চাষ করতেই হয়, তবে ওই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। উৎপাদিত ফসল পেপসি কোম্পানিকেই বিক্রি করতে হবে। এই নিয়ে জল ঘোলা হতে শুরু হয়েছে।
ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট-এর প্রসঙ্গ টানছে আলুর চিপস তৈরি করার এই কোম্পানি। অন্যদিকে চাষীরা বলছে তাদেরও বীজ সংরক্ষণের অধিকার আছে। নিজের জমির ফসলের বীজ যদি সংরক্ষণ করা হয় তবে তা কি করে পেপসি আটকাতে পারে? বারবার কেন বীজ কিনতে হবে? অত পয়সা কোথা থেকে আসবে? কেনই বা ওই আলু শুধুই পেপসি কোম্পানিকে বিক্রি করার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে?
ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগানাইজেশন-এর বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য বিস্তারের ফলস্বরূপ পেপসি কোম্পানির ভারতীয় চাষীদের বিরুদ্ধে এটি প্রথম মামলা। সাধারণ চাষীরা এইসব না জানলেও অনেকে এই মামলাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। কি করে কোন বিদেশি কোম্পানি জোর করে আমাদের দেশজ চাষীদের ফলন নষ্ট করতে বলতে পারে! কি করে একটি বিদেশি কোম্পানি আমাদের দেশের চাষীদের একটি বিশেষ কিছু চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনতে পারে! আলুর বীজের থেকে চাষীরা যে বীজ তৈরি করল ওটা ওদের পরিশ্রমের ফসল। এটা কেন করা যাবে না! বীজ তো চাষীদের মূলধন। এই অধিকার নষ্ট করা যায় কি করে? বীজ কেন রক্ষা করা যাবে না? সম্পদ কেন নষ্ট করে দিতে বাধ্য করা হবে? 
কিন্তু মামলার শুনানি ও রায় মনে হয় পেপসি কোম্পানির পক্ষে যাবে। কারণ এসব বড় বড় আন্তর্জাতিক চুক্তির ফসল। এতে ভারত মার্কিন নিউক্লিয়ার চুক্তির প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য। গ্লোবালাইজেশন, লিবারালাইজেশন, পেটেন্ট অ্যাক্ট ইত্যাদি নামগুলো এর সঙ্গে জড়িত। আইএমএফ, ডব্লিউটিও, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এর সঙ্গে জড়িত। এই মামলা পেপসি যদি হেরে যায় বা ভারতীয় চাষীদের পক্ষে যদি এই মামলার রায় দেওয়া হয় তবে জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড বীজ তারা নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারেে। বলে কয়ে না এনে অ্যাডভান্টা আর মনসান্টোর মতো লুকিয়ে চুরিয়ে নিয়ে আসতে পারে। এর ফলে সেই বীজে একবারই ফলন হবে। যদিও আমরা আবার 'জিএম সীড'স-এর বিরুদ্ধে। 
কৃষক নিজের দেশেই পরাধীন হয়ে যাচ্ছে। মামলার রায় যাই হোক না কেন, দৈত্যাকার একটি বিদেশি কোম্পানির দ্বারা সহায় সম্পদহীন কৃষকদের বিরুদ্ধে করা এই মামলা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।