আমার বোধবুদ্ধি কমে যাচ্ছে দিনের পর দিন। ছেঁড়া পাজামা আর পিন মারা চটি পরে একমুখ খোঁচা দাড়ি নিয়ে হাভাতের মতো ভাতের লড়াই করে মরছি। দিনরাত ধারাপাতের মতো একই কথা বলছি। এই দাও। ওই দাও। সেই দাও। হাতি দাও। রুটি দাও। চেয়েই মরি দিনরাত। এক পয়সার মুরোদ নেই আমার কিন্তু চাওয়ার শেষ নেই। ছিঃ ছিঃ। মাঝে মাঝে লজ্জা হয় জানেন। নিজের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আমি লজ্জায় পড়ে যাই। এতটা হ্যাংলা ছিলাম না আমি। আধপেটা খেয়ে খেয়ে আমার হ্যাংলামি বেড়েই যাচ্ছে।
কাদের কাছে চাইছি জানেন কি? লজ্জার মাথা খেয়ে ন্যাংটা হয়ে আমাদের দেশের নির্বাচিত নেতাদের কাছে এইসব ভিক্ষা করছি আমি। তারা কোটিপতি। লোকসভার ৪৩০জন নেতা কোটিপতি। অনেকে শতকোটিপতি। অনেকে সহস্রকোটিপতি। এদের কাছেই আশায় আশায় চাইছি। এই গরীবের ঝোলায় যদি কেউ এক মুঠো চাল ফেলে দেয় তবে দুবেলা সপরিবার খেয়ে একদিন আরও বেশি বাঁচতে পারব। এই ভিখিরির হাতে যদি গমের দাম ঠিকঠাক দেয় তবে দাদনের ধারদেনা খানিকটা শোধ করে দিতে পারব। মাঝে মাঝে মনে হয়ে আমি পার্লামেন্টের বারান্দায় চাটাই পেতে বাটি হাতে বসে আছি। বারান্দা দিয়ে যাওয়া ধোপদুরস্ত কোটিপতিদের জুতোর গন্ধে মেতে থাকছি। ওদের যেতে দেখলেই করুণ মুখে চেয়ে থাকছি। আর বাটি নাচাচ্ছি। কাজ দাও। পারিশ্রমিক দাও। ওষুধ দাও। জল দাও। খাদ্য দাও। লজ্জার মাথা খেয়েছি। ছিঃ।
কিন্তু এখন আমার অনেক গর্ব। সারাজীবন যাদের কাছে চেয়ে গেলাম, আজ তারাই আমার কাছে কিছু চাইছে। সারা জীবন যাদের লাথি খেয়ে বড় হলাম আজ তারাই হাতজোড় করে আমার চাটাইতে বসে আছে। ওরা অনেক কিছু দেবে বলছে। ওরা চাঁদের বাগানের আমগাছ থেকে দুটো আম দেবে। ওরা সমুদ্র থেকে অমৃতকুম্ভ তুলে এনে আমার হাতে ধরিয়ে দেবে কথা দিচ্ছে। শুনেছি মঙ্গল গ্রহে ওরা একটা মুরগির পোলট্রি খুলেছে। সেখান থেকে এক ডজন সোনার ডিম দিতে পারে। এবার ওরা হাত পেতে আমার সামনে ভক্তিভরে বসে আছে। গর্বে আমারও ছাতি ফুলে আজ ছাপ্পান্ন ইঞ্চি হয়ে গেছে। এই কোটিপতিদের আমিও কিছু দিতে পারি সেই উদারতায় আমি আনন্দে লুটোপুটি খাচ্ছি। ওরা ভোট চাইছে। আমি ওদের ভোট দিয়েই সুখী থাকব কথা দিচ্ছি।