আমাদের বাড়িতে দুধ দিতে আসে এক যাদবজি। দুধে জল মেশানোর ব্যাপারে ওর একটা দুর্নাম আছে। কিছু বললেও চটে যায়। যেটুকু রোজ ফাউ দেয় তাও সেদিন দেয়না। কিন্তু আজ বাড়িতে দুধ দিতে এলে আমি বললাম, আজ বিশ্ব জল দিবস, জান তো ভায়া। অমনি ও মশকরা করে চটজলদি বলল, ঠিক আছে, তাহলে আজ একটু জল বেশিই খান। আমি বললাম, আরে আমি তাই কি বলেছি নাকি! যাদবজি বলল, আপনি জল বললেই আমার রাগটা চড়াং করে টং-এ চড়ে যায়। আমি বললাম, আহা, আমি তোমাকে বলতে চাইছিলাম আজ জল সংরক্ষণ করতে হয়, বেশি জল খরচ করতে নেই। যাদবজি এবার রেগেমেগে বলল, জানতাম, আপনি জল ছাড়া কিছুই বলতে জানেন না। আজ আবার ফাউ দুধটা ফাঁকি পড়ে গেল। তারপর আর কথা না বাড়িয়ে সাইকেলে দুধের ক্যান্টার বেঁধে ঘন্টি বাজাতে বাজাতে বলে গেল, মনে করুন আজও আপনার টাকাটা জলে গেল।
সকালে যাদবজিকে মোক্ষম ওষুধ দিয়ে মনটা একটু ফুরফুরে ছিল। বাদ সাধল রাজনীতি। বিজেপি এতদিন ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিল। আদবানিকে বিজেপি এবার টিকিট দিচ্ছে না। আর এই খবরের পেছনে আদা জল খেয়ে লেগেছে কিছু মিডিয়া আর কংগ্রেস। যে যার মতো করে আদবানির টিকিট না পাওয়ার দুঃখে একেবারে নাকের জলে চোখের জলে। কেউ কেউ তাতে খানিকটা নুন মিশিয়ে দিচ্ছেন - স্মৃতি ইরানি একবারও ভোটে জেতেননি, তাঁকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে, অথচ প্রতিবার জিতে আদবানি টিকিট পাচ্ছেন না! অনেকে ভাবছে এই ধরণের জলপোড়া মন্ত্রেই বিজেপি জলে ডুববে। আমার মতো অনেকে আবার ঘোলা জলে মাছ ধরার জন্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে যাচ্ছে। তবে আদবানির ওপর যার যার রাগ আছে তাঁদের রাগ এবার জল হতে বাধ্য।
আজ বিশ্ব জল দিবস। আজ থেকে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিটা নিউজ পোর্টাল এবং সংবাদপত্র জল সংকট ও দূষণ নিয়ে কিছু না কিছু লিখবেই। আন্টার্টিকার বরফ কেন গলছে। নদীর দূষণ কেন বাড়ছে। শহরের নিচে জলস্তর কমছে। সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে। আবার তাতে তিস্তার জল, সিন্ধুর জলও থাকতে পারে। তবে এইসব নিয়ে আমি কিছু লিখতে গেলে তা পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক হবে। এতে পরিবেশবিদদের কাছে থেকে প্যাঁক খেতে হতে পারে। এই জল দিবসে ওঁরা আমার উদ্দেশ্যে বলতেই পারেন, হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল। তাই আর জল ঘোলা করে লাভ নেই। কারণ জল আমাকেও তো খেতে হবে। অযথা ঘুলিয়ে খেলে আবার কেউ আমাকে গাধা বলে দিতে পারেন। নিজের পরিচয় দিয়ে লাভ নেই ভায়া। তবে আমাদের যাদবজি জলের সত্যিই অপচয় করছে। এবার এর একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার।