আজ হঠাৎ আমার এক দোকানদারের কথা মনে পড়ে গেল। লোকটা কাছারির এক বটতলায় জড়িবুটির পসরা সাজিয়ে বসে থাকত। সামনে একটা সাউন্ড বক্স থাকত। তার হাতে থাকত মাইক। মাটিতে লাল শালুর ওপর বিভিন্ন ধরণের জড়িবুটি আর হাড়গোড় থাকত। ঠিক তার পেছনে আট দশটা পুরোন ফটো থাকত। কয়েকটা ল্যামিনেট করা সার্টিফিকেট থাকত। সেগুলো ছিল তার সফলতার বিজ্ঞাপন। 
এক হাতে মাইক আর এক হাতে এক একটা করে স্যাম্পল নিয়ে প্রচার শুরু করতেই মানুষের ভীড় জমে যেত। ওর ওষুধের গুণাগুণ ছিল বহুমুখী। মানুষজন গুণমুগ্ধ হয়ে শুনত। একই ওষুধে যে কোন ব্যথা সারানোর মতো দাবি করত দোকানি। একটা ওষুধ গরমজলে গুলে শুঁকলে যে কোন ধরণের জ্বরজালা, সর্দিকাশি সেরে যেত। ওই ওষুধটা আবার ঠান্ডা জলে গুলে খেলে যে কোন রকমের পেটের রোগ সেরে যেত। ডায়াবিটিজ সারানোর পুরিয়াতে একটু গুঁড়ো পাউডার থাকত। দাঁতের পোকা থাকলেও ওই ওষুধেই কাজ হত। অনেকগুলো হাড়ের টুকরো সাজানো থাকত। দরজার ডানদিকে পেরেক ঠুকে রেখে দিতে পারলে মানুষ ও জীবজন্তুর বশীকরণ করা যেতে পারত। অমাবস্যার দিন শ্মশানে গিয়ে একহাত গর্ত করে হাড়টা পুঁতে দিলে পরের দিন শুভ খবর আসতে বাধ্য ছিল। অনেকগুলো শুকনো ছোট ছোট কাঠের টুকরো থাকত। শনিবার বা মঙ্গলবারে কুয়োর জলে স্নান করে মাদুলি বানিয়ে পরে নিলে কাছারির যে কোন মামলা জেতা যেত। এইরকমই দাবি ছিল। আজগুবি লাগল কি? 
যে কোন সুস্থ মানুষের এই গল্পটা আজগুবি লাগতে বাধ্য। আমি ফ্যাসাদে পড়ে কোর্ট কাছারিতে ঘুরেছি। আমি দেখেছি। যারা আমার মতো ফ্যাসাদে পড়েননি তাঁরা এইরকম পপুলার দোকানিদের দেখেননি। পপুলার দোকানি কাছারি ঘোরা লোকেদের চাহিদাগুলো একেবারে ঠিকঠাক আন্দাজ করে মাইক হাতে এমন আকর্ষণীয় প্রচার চালাত যে ভীড় বেড়েই চলত।
তবে আজকাল কাছারি না ঘুরেও আপনি পপুলার দোকানি দেখতে পাবেন। টিভি খুলুন। যে কোন একটা খবরের চ্যানেল খুলুন। তাতে দেখতে পাবেন নানা ধরণের নেতা আছেন। তাঁরাও মাইক হাতে ভোটের ইস্তাহার হাতে এক নাগাড়ে নিজের দলের গুণাগুণ আউড়ে যাচ্ছেন। তাঁরা মনের ভেতর দেশপ্রেম চাগিয়ে তুলছেন। সব দুঃখের জন্যে ভোট নামের একটা ওষুধ বাতলে দিচ্ছেন। এই ওষুধের গুণে আপনি খালি চোখেই আচ্ছে দিন দেখতে পাবেন। এর গুণে আপনি স্বপ্নেই দেখে নিতে পারবেন আপনার ব্যাংকে পনের লাখ টাকা চলে এসেছে। ভোটের ওষুধ খেলে আপনি বছরে দু’কোটি চাকরিও খুঁজে পাবেন। এরা হলেন পপুলিস্ট। পপুলিস্টদের কাছে সব পাবেন। পপুলিস্টরা এ যুগের কল্পতরু। আপনার মনের ভেতর একটা চৌকিদার ঘাপটি মেরে বসে এসব দেখতে পাবে। যদি এসব দেখতে না পান তবে বুঝতেই হবে আপনি ডাঁহা বদমায়েশ অথবা দেশদ্রোহী।