মাঝে মাঝেই আমাদের দেশোয়ালি ভক্তরা চীনের মাল বয়কট করার জন্যে আন্দোলন করছে। অনেক বছর ধরেই এই রকম দেখতে পাচ্ছি। দেশপ্রেম উথলে উঠলেই দেশোয়ালি ভক্তরা চীনের বিরোধিতা করে। বছর কয়েকের মধ্যে ডোকালাম ও অরুণাচল প্রদেশে ভারতের সঙ্গে চীনের সংঘাতের সময়ে এই কান্ড হতে দেখেছি। এবার পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময়ে একই কান্ড হতে দেখতে পাচ্ছি।

আগামী ১৯ মার্চ হোলিকা দহনে সস্তার ‘চায়না মাল’ পুড়িয়ে দেশভক্তদের প্রতিবাদ দেখতে পাব। মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণায় চীনের আপত্তির চোট এবার ভারতে চীন থেকে আগত চায়না মালের ওপর পড়বে। যেমন, পিচকারি, টুনি বাল্ব, বিভিন্ন ধরণের খেলনা, সস্তার জুতো, প্লাস্টিকের নানা ধরণের ঘর সাজানোর জিনিস ইত্যাদি পুড়িয়ে আন্দোলন হবে। এটা একটা হাসির খোরাক। যদিও ভক্তদের কাছে এই কাজ দেশাত্মবোধক ব্যাপার। এবং এর সমালোচনা করা মানেই দেশদ্রোহিতা। ব্লগ লেখককে অনেকেই চীনের দালাল বলে গালাগালি করতেও পারেন।

জেনে রাখা ভাল, ভারতের বহু ওষুধ কোম্পানি বর্তমানে চীন থেকেই কাঁচামাল আমদানি করে। অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা চীনের কাঁচামালের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। চীন থেকে মাল না কিনতে পারলে ওষুধ তৈরির ওপর বিরাট চোট পড়বে। এবং একবাক্যেই এটা স্বীকার করে নেওয়া যায় যে এরকম হঠকারিতা কোনও ওষুধ কোম্পানি চাইবেনা। ভক্তরা এসব জানে কি জানিনা।

জানিয়ে রাখা ভাল, চীন তার মোট রপ্তানির মাত্র দুই শতাংশ ভারতে রপ্তানি করে। ফলে চীনের ওপর অর্থনৈতিক চোট ততটা ব্যাপক হবেনা। যদিও বাবা রামদেবের পতঞ্জলি অর্থনীতি বলছে ভারত চীন থেকে মাল কেনা বন্ধ করলে চীনের পতন অনিবার্য। ভারত যদি চীনের সব আমদানি বন্ধ করে দেয় তবে ভারতের ওষুধ ও রাসায়নিক শিল্প, মোবাইল ও টেলি কমিউনিকেশন শিল্প, বিভিন্ন ধরণের ভারী শিল্প, ইলেক্ট্রনিক্স ও কম্পিউটার শিল্প, ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষতি হবে। কারণ চীন ভারতের রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল না থাকলেও ভারতের এইসব শিল্প চীন থেকে আমদানির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এক সপ্তাহ আগেই একটা খবরের কাগজের একটা ছবিতে দেখলাম মেট্রো ট্রেনের অত্যাধুনিক অসংখ্য রেক নামছে ভারতীয় বন্দরে। এগুলো পোড়ান যাবেনা। এগুলো পুড়তে দেবেনা ভারত সরকার। ভক্তরা এই অর্থনীতির অঙ্কটা জানেই না।
ভক্তরা হয়তো জানেই না যে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের স্ট্যাচুটাও চীনের প্রযুক্তি ও ওই দেশের প্রযুক্তিবিদদের তত্ত্বাবধানে তৈরি।
তবে ১৯ মার্চ ২০১৯ সালে দোলের আগের দিন সন্ধে বেলায় প্লাস্টিকের খেলনা পুড়িয়ে ভক্তরা ‘নাকের বদলে নরুণ’ পেয়ে তাক ডুমাডুম নাচবেই। আর নাচতে নাচতে 'জ্যায় সিরাম' হাঁক পাড়বেই। তারপর 'ভারত মাতা কি জ্যায়' বলে ওপ্পো, জিয়োনি, ভিভো কিংবা ওয়ান প্লাস মোবাইলে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করবেই। দেশপ্রেম মানুষকে বোকা বানিয়ে ছাড়বেই।