এবার সবাই জুমলা চিবিয়ে চায়ে চুমুক দিন



মোদির ভারতে জুমলার শেষ নেই। গামলা ভরা জুমলা নিয়ে এবার মোদির চায়ের দোকানগুলো থেকে এককাপ চায়ের সঙ্গে দুটো জুমলা ফ্রি দিচ্ছে। চায়ের দোকানে জমজমাট ভীড়। মানুষ এখন জুমলা চিবিয়ে চুমুক দিয়ে চা খাচ্ছে। তাতেই আফিমের নেশার মতো বুঁদ হয়ে যাচ্ছে। দোকানি বলছে বন্দেমাতরম। নেশাগ্রস্ত মানুষও বলছে বন্দেমাতরম। দোকানি বলছে ভারতমাতা কি জয়। জুমলা খেয়ে ঢোক গিলে চায়ের দোকানের ভিড়টাও ঠিক ওইরকম ভাবে চেঁচিয়ে উঠছে। ভারতমাতা কি জয়। দোকানি বলছে মোদি কি জয়। জুমলা ফ্রি খেয়ে মানুষও বলছে তাই। বিষাক্ত মদ খেয়ে মানুষ অন্ধ হয়ে যায় অনেক সময়ে। জুমলা খেলে মনে হয় মানুষ অন্ধ আর পাগল দুটোই হয়। জুমলা খেয়ে ভীড়টায় সবার বুকের পাটা ছাপ্পান্ন ইঞ্চি করে চওড়া হয়ে গেছে ততক্ষণে।

আমি দুদিন ধরে রাতের বেলা আধজাগা হয়ে প্রচুর খোঁচাখুঁচি করেছি। প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরের ওপর চোখ বুলিয়েছি। কমপিঊটারে ভাইরাস ঢুকে যাওয়ার ভয়ে শুধু পাকিস্তানের মিডিয়ার খবরগুলো খুলেও দেখিনি। মাইরি বলছি। ৩৫০ জন সন্ত্রাসবাদী খতম হওয়ার খবর কেউ দিতে সাহস করেনি। মনে হয় ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ভয়ে। তবে বিভিন্ন দেশের বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম খবর তৈরি করার ব্যাপারে একটা সামঞ্জস্য রেখে চলেছে। তারা হতাহত নিয়ে ভারতের দাবি পেশ করেছে। তার সঙ্গে সঙ্গেই এই দাবি নাকচ করা নিয়ে পাকিস্তানের বক্তব্যও পেশ করেছে। তারা আয়নার মতো কাজ করেছে। তার সঙ্গে অনেকেই লেজুড় জুড়ে বলেছে ভারতের দাবির সমর্থনে কোন তথ্য প্রমাণ এখনো সামনে আনা যায়নি। 

প্রথম দিন থেকেই হতাহত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এই বিতর্ক শুরু হবে বলেই ভারতের কিছু মিডিয়া আগাম প্রচার শুরু করেছিল যে পাকিস্তান বালাকোটের ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে নিয়ে যেতে দেরি করবে। কারণ লাশ সরিয়ে, সব কিছু পরিষ্কার করে তবেই মিডিয়াকে যাওয়ার আমন্ত্রণ দেবে তারা। হলও তাই। মিডিয়া পৌঁছোতে দেরি হয়েছে। তার কারণ হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক প্রবক্তা আবদুল গফুর বলেছেন, মিডিয়াকে জিরো স্পটে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বা ওয়েস্টার্ন ডিস্টার্বেন্সের কারণে তাঁরা মিডিয়াকে হেলিকপ্টার উড়িয়ে ওখানে নিয়ে যেতে দেরি করছে। কিন্তু ততক্ষণে আবহাওয়ার পরোয়া না করেই বিবিসির সংবাদদাতা ওখানে পৌঁছোতে পেরেছেন। এবং তিনি জাবা নামক গ্রামের লোকদের সঙ্গে কথাও বলে ফেলেছেন। সর্বপ্রথম তাঁর পাঠানো খবরই ওই এলাকা থেকে সবার কাছে এসে পৌঁছোয়। যদিও পাকিস্তানের একটি বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’ এই বিষয়ে খবর করতে শুরু করেছিল। আমি এই ডনের খবরটাও অপাকিস্তানি মিডিয়াতে পড়েছি। যেহেতু ওটা পাকিস্তানের মিডিয়া তাই ভারতীয়দের ওই মিডিয়ার খবর বিশ্বাস না করলেও চলত। এরপর পৃথিবীর প্রায় সমস্ত মিডিয়ায় খবর আসতে শুরু করেছে। 

তাতেই শোনা গেছে বোম পড়েছে বালাকোটের কাছে জাবা গ্রামের এক কিলোমিটার দূরে। সেখানে জনবসতি নেই বললেই চলে। বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ওই এলাকাটায় ভেড়া চরাতে আসে। ১০০০ কেজি বোম পড়ার পরে সেখানে মাত্র একজন আহত হয়েছেন আর গোটা পনের পাইন গাছ নষ্ট হয়েছে। ভারতীয় মিডিয়ায় কিন্তু উল্লাস তখনো শেষ হয়নি। ৩৫০ জঙ্গির মধ্যে কে কার খুড়তুতো ভাই, কে কার শ্বশুর, কে কার নিজের ভাই, সৎ ভাই এইসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে। আর আমাদের দেশের উন্মাদ মিডিয়ার দর্শক ততক্ষণে বদলা নেওয়ার আনন্দে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পটকা ফাটিয়ে ভারতমাতার জয়ধ্বনি শুরু করে দিয়েছে। উন্মাদ জনতা জুমলার জাবর কাটতে শুরু করেছে। ততক্ষণে মোদি তাঁর নির্বাচনি ভাষণে পরিকল্পিত ভাবেই তাঁর নিরাপদ হাতের গন্ধ শোঁকাতে শুরু করে দিয়েছেন। 

গতকাল থেকে আর কিন্তু ৩৫০ জনের গল্প মিডিয়া শোনাচ্ছেনা। কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা ওই নিহত ৩৫০ জনের মধ্যে একজনের বাড়ির দরজায় গিয়ে কড়া নাড়েনি। তাদের কান্নার রোল কেউ কোথাও দেখায়নি। কোন মিডিয়াতে আমরা ভাঙা বাড়ির কড়িবরগার ফটোও দেখিনি। এমনকি শববাহী ভিড় কেউ কোথাও দেখতে পায়নি। কোথাও কোন গণকবর কেউ দেখতে পায়নি। এমনকি গ্রামীণ মানুষ লাশ সরাতেও দেখেনি। আমাদের মিডিয়ার যা স্বভাব তাতে তারা বলতেই পারে যে আন্তর্জাতিক মিডিয়া এইসব জঙ্গিদের ব্ল্যাক আউট করে দিল। বলতেই পারে। পাগলে তো অনেক কিছুই বলে।

যদিও কথায় বলে যা রটে তার কিছুটা তো নিশ্চয়ই বটে। ইতালির এক সংবাদমাধ্যম বলেছে ভারতের বোমার আঘাতে চারটে মাদ্রাসা ধ্বংস হয়েছে এবং পাক সেনা ৩৫টি লাশ সরিয়েছে। যুদ্ধ সব সময়ে মিথ্যে খবর বয়ে বেড়ায়। যুদ্ধ গুজব বয়ে বেড়ায়। তাই এত সহজে বলা যাবেনা ঠিক কি হয়েছিল ওখানে। পাকিস্তানের কাগজের ওপর তো ভরসা কখনোই করা উচিত হবেনা। তেমনি ভারতের মোদির সমর্থক এবং প্রচারক সংবাদমাধ্যমের ওপর ভরসা করে সঠিক কিছু আন্দাজ করা বোকামি।

Post a Comment

0 Comments