বাজার থেকে একটা নরম টাইপের ফ্লেক্সিবল শিরদাঁড়া কিনে পরে ফেললেন। পুরোন শিরদাঁড়া পালটে ঘরে রেখে দিলেন। ফেলে দিলে বিপদ আছে। যখন সোজা ও শক্ত শিরদাঁড়া লাগাতে হবে তখন আবার কিনতে হতে পারে। খরচ আছে। মন্দার বাজারে এত খরচ করা ঠিক না। তারপর দিদিভাই এক হাঁড়ি রসগোল্লা কিনে আর একজোড়া ধুতি কিনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে সটান দাদাভাইয়ের বাড়ি। এই নিয়ে পাড়ায় গেল গেল রব উঠল। সবাই চেঁচামিচি শুরু করে দিল।

নিন্দুকেরা সেটিংবাজি আর চিটিংবাজির গন্ধ পেল। কাল পর্যন্ত যে দাদার কথা শুনলে দিদি তেড়ে উঠতেন। আজ হঠাৎ পীরিত কেন? দাদাও হাইকোর্ট দেখাতেন। বলতেন, দেখে নেব এবার। এবার এসপার ওসপার করে ছেড়ে দেব। আর মাত্র একশো দিন। তারপর দেখ কি করি আমি। এসব হুমকির চমক নিয়ে বাজার গরম আছে দেড়বছর। সেই দাদাই বা কি করে দিদিভাইকে পারিবারিক করে নিলেন?

তার মানে, দাদারও মেরুদন্ড ফ্লেক্সিবল। বিগ বিজনেস টাইকুনদের সঙ্গে কোলাকুলি করতে তিনি অভ্যস্ত। দাদাভাই অন্যের সংসার থেকে চোর আর পকেটমার ভাঙিয়ে নিজের দল ভারি করতে সিদ্ধহস্ত। এইসব অভ্যাসের ফলে তাঁর শিরদাঁড়া যথেষ্ট নরম হয়ে গেছে। ব্যাঙের গালেও চুমু খেতে কোন অসুবিধা হয়না। তাঁর আবার জিভটাও ফ্লেক্সিবল। জিভ লম্বা করলে চাঁদের মাটি চাঁটতেও অসুবিধা হয়না। এসব আমরা দেখে দেখে অভ্যস্ত। দিদির একহাঁড়ি মিষ্টির সৌজন্য সামলাতে না পেরে দিদিকে নিজের বাড়িতে ডেকে আপ্যায়ণ করে বসিয়ে টানা একবেলা সাংসারিক আলোচনা চলল। পারিবারিক আলোচনা কাকপক্ষীও টের পেলনা। তবে সবাইএকটা কিছু আন্দাজ করল।

দিদি বলেন, সংসার টিকিয়ে রাখতে গেলে ওসব আমাকে বলতেই হয়। সিরিয়াস কিছু নেই ওতে। রাগ করো না প্লিজ। সিরিয়াস হচ্ছে আমার কানু দারোয়ানকে তোমার লেঠেল গেছে গ্রেফতার করতে। এই ব্যাপারটা সিরিয়াস। এর ফলে আমাদের কুস্তি আর দোস্তির ইকুয়েশানটা জটিল হয়ে যাবে। আর তাহলেই নেপোয় দই মেরে চলে যাবে। সংসার ছাড়খাড় হয়ে যাবে। সংসার করতে গেলে একটু রাগারাগি হতেই পারে। তাতে কি হয়েছে! সংসার তো একটাই। আমি দিদি আর তুমি দাদা। বাকিরা হাঁদাভোঁদা। আমি জগাই আর তুমি মাধাই। বাকিরা সব সঙের গোঁসাই। কি ঠিক তো!
<>
দাদা বলেন, তা ঠিক, তা ঠিক। তোমায় কানে কানে বলছি দিদিভাই, আসলে আমার দাঁত দু’রকমের। একটা হাতির দাঁতের মতো লম্বা আর ব্যাঁকানো। ওটা দিয়ে ভয় দেখাই। এই বিশাল সংসার টিকিয়ে রাখতে হাতির দাঁত ছাড়া উপায় নেই। তবে ওটা আমার অলঙ্কার মাত্র। আর কাজের দাঁতটা আলাদা। তুমিও আমার বিশাল সংসারের দিদিভাই বলে কথা। তোমার কথায় আমার রাগ হয়না গো। এই বলেই হাঁড়ি থেকে একখাবলা রসগোল্লা তুলে মুখের মধ্যে পুরে চিবোতে চিবোতে পুরো আলোচনাটাই পেটে পুরে ফেললেন। সংসারের আলোচনা গোপন থেকে গেল। পারিবারিক আলোচনা হাঁদাভোঁদার সামনে না আনাই ভাল।

দাদাভাই আর দিদিভাইয়ের পরিবার এইরকম ভাবেই চলে। আসলে একহাঁড়ির সংসারে এইরকম একটু খটাখটি হয়েই থাকে। মারমার কাটকাট হয়েই থাকে। পরে জোড়াও লাগে। এইসব দেখে হাঁদাবাবু ভাবেন, আপনাদের তো সেটিং হয়ে গেছে আর আমাদের? সবকিছু শুনে ভোঁদাবাবু বলেন, অ্যাই চোপ, সিমেন্টের বিজ্ঞাপনটা পেটেন্ট করা। এই কথা বললেই জরিমানা হয়ে যাবে কিন্তু।