আপনাদের ‘নঈ ইন্ডিয়া’ কেমন আছে দাদা! একমাস হয়ে গেল। এরমধ্যেই নতুন ইন্ডিয়ার একটা ঝলক দেখুন। রেল কোম্পানি তার প্রিমিয়াম ট্রেনগুলোকে বেচে দেবে শোনা যাচ্ছে। ‘দুর্বল’ ব্যাঙ্কগুলো বিক্রি হয়ে যাবে বলা হচ্ছে। বীমা কোম্পানিগুলোও নাকি বেসরকারি হাতে দিয়ে দেওয়া হবে। বিএসএনএল লাটে উঠেছে। ইন্ডিয়া পোস্ট ঘাটে ওঠার জন্যে তৈরি হচ্ছে। সরকারি কোম্পানিগুলো বেচে দিয়ে সরকার যে টাকা রোজগার করবে তা দিয়ে কি কি হবে? জনকল্যাণ? শৌচালয়? গঙ্গা পরিষ্কার? কি জানি ভাই। অর্থনীতি বুঝিনা।

আপনাদের ‘নঈ ইন্ডিয়া’তে কিন্তু মানুষ মারার কায়দাটা পুরোনই থেকে গেছে। ভোটের আগেও মব লিঞ্চিং হত। গোরু চুরির দায়ে মানুষকে মেরে ফেলা হত। এখনও তাই হচ্ছে। আজ ঝাড়খন্ডে একজন গণপিটুনিতে মারা গেল। আপনারা দাঁত কেলিয়ে হাসছেন তো! হাসুন। যত হাসি তত কান্না বলে গেছে রাম শর্মা। জানেন তো! মেজরিটারিয়ান সরকার। এখন মেজরিটারিয়ানিজম-এর যুগ চলছে। মেজরিটি এখানে গুরুত্ব পাবে। মেজর আর মাইনর ভাগাভাগি হয়ে যাবে। মেজর যা বলবে মাইনরকে তা মানতে বাধ্য থাকতে হবে। বেশির ভাগ লোকের যা ভাল লাগে তাই করা হবে। তাই গণপিটুনির চোটে মানুষ মরবে। কুয়ো থেকে জল তোলার অপরাধে কুয়োতে ডিজেল ঢেলে কুয়োটাই নষ্ট করে দেওয়া হবে। বিয়েতে ঘোড়ায় চাপলেও মেজরিটারিয়ান জনরোষে মাইনর মানুষ খুন হয়ে যাবে।

হিন্দু, মুসলমান, খ্রীস্টান, আদিবাসী, দলিত, শিক্ষিত, নিরক্ষর ইত্যাদি নিয়ে প্রসঙ্গকে বিতর্কিত করতে চাইছিনা। মানুষ খুন হচ্ছে। মানুষ অবহেলিত থাকছে। মানুষই মানুষকে মারছে। আর আমরা ‘নঈ ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন দেখছি। পার্লামেন্টেও ‘নঈ ইন্ডিয়া’ ঢুকে পড়ে জয়শ্রীরাম, জয় বাংলা, আল্লাহু আকবর বলে চেঁচামিচি শুরু করে হাততালি কুড়োচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতা এখন একটা রাজনৈতিক শব্দ।

বহুসংখ্যাবাদ বা মেজরিটারিয়ানিজম একটা ‘ইজম’। এখানে সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত লোকটাকে হাত ধরে টেনে তোলার তত্ত্ব ভুলে যেতে হবে। পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে হতভাগাদের! রবীন্দ্রনাথের ‘দুর্ভাগা দেশ’ কবিতাটা এখন যুগোপযোগী লাগছে বেশি করে। ওই কবিতার প্রতিটা লাইন কানে বাজতে শুরু করেছে আমাদের ‘নঈ ইন্ডিয়া’র মঞ্চে। ভেসে আসছে সেই লাইন দুটো,
“যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে যে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।”