দিল্লিতে FICCI-র বার্ষিক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর জমি নীতি নিয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে এসেছেন। রাজ্যে জমির অভাব নেই। প্রচুর জমি পড়ে আছে। সুন্দরবনে জমি আছে। জমি দার্জিলিঙেও আছে। সুন্দরবনের জমিতে পর্যটন শিল্প ‘আফ্রিকান সাফারি’ করার জন্যে তিনি শিল্পপতিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন। দার্জিলিঙে তিনি ‘সুইজারল্যান্ড’ শিল্প করতে চান। বণিকদের সেখানে হোটেলশিল্প খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। হোটেল খুললে কম জমি লাগে। আর তার চারপাশে চাষের জমিও থাকে। অর্থাৎ শিল্প ও কৃষি একসঙ্গে হতে পারে। শিল্প হবে, আর কৃষক না খেতে পেয়ে উপোস করে মরবে! এটা একেবারেই সহ্য করা যায়না। তাই হোটেল হলে হোটেলগুলিতে পর্যটকরা আসবে। চাষিরা তাদের ফসল একেবারে মাঠে বসেই বিক্রি করে দিতে পারবে, এর ফলে দালাল চক্র থাকবেনা। কৃষি এবং পর্যটন পাশাপাশি থাকবে। তিনি উত্তরবঙ্গের সব পাহাড়েই পর্যটন বাড়ানোর জন্যে তিনি শিল্পপতিদের নির্ভয়ে হোটেলশিল্প খুলতে বলেছেন। অর্থাৎ সাপও মরবে। আবার লাঠিও ভাঙবেনা।

অনেকে অনেকরকম গুজব ছড়াচ্ছে। তাঁরা যেন গুজবে কান না দেন। চক্রান্ত চলছে। কোন রকম চক্রান্তের স্বীকার যেন তাঁরা না হন। হোটেলশিল্পের পাশাপাশি যেমন চাষিশিল্প বা কৃষিশিল্প হবে। তেমনি আরেক পাশে বস্ত্রশিল্প বা শাড়িশিল্পও হবে। শিল্পপতিরা শাড়িশিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। পর্যটকরা ঘুরতে এসে এক ডজন করে শাড়ি কিনে নিয়ে যাবেন। বাড়ি সামলাতে গেলে নতুন নতুন শাড়ির দরকার পড়ে। অন্যান্য রাজ্যে এবং বিদেশে গ্রামবাংলার শাড়ির চাহিদা প্রচুর। প্রচুর শাড়ি বিক্রির সম্ভাবনা আছে। এর ফলে তাঁতিরা তাঁত বুনেই খেতে পারবে। তাদের আর এঁড়ে গোরু কিনতে হবে না। তাছাড়া বিড়িশিল্পের দিকেও তিনি শিল্পপতিদের ঝুঁকতে বলেছেন। পর্যটকরা হোটেলে বসে বসে দেশি বিড়ির আমেজ পাবেন। 

তিনি বলেছেন, শিল্প করতে জমির সমস্যার কথা নিয়ে এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম সমালোচনা করছে। এই রাজ্যে জমি কোন সমস্যা নয়। জমি আপনারা নিজেরাই কিনে নিন। সরকার জোর করে কৃষকের জমি কাড়বেনা। আবার কৃষকের জমি আপনারা কাড়াকাড়ি করলে সরকার আপত্তিও করবেনা। তাই জমি কেনা আপনাদের কাছে কোন সমস্যা হবেনা। এটা আমার একেবারে স্পষ্ট কথা। আপনারা আসুন। বিনিয়োগ করুন। প্রচুর হোটেল খুলুন। প্রচুর শাড়ির দোকান তৈরি করুন। বিড়ির দোকান তৈরি করুন। পশ্চিমবঙ্গে শিল্প সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দরকার পড়লে আমাকে স্মরণ করুন। আপনাদের কাজ আমি ‘সিম্পল’ করে দেব। 

ওই সভায় উপস্থিত ব্যাবসাদাররা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে মুগ্ধ হয়েছেন বলেই শিল্পমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন। তাই তিনি আশা করছেন আগামী দিনে বিড়িশিল্প, শাড়িশিল্প এবং হোটেলশিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। জমি সমস্যার জট আপনাআপনি ছেড়ে যাবে। বিনিয়োগকর্তারা একবার মাঠে নেমে জমি কেনা শুরু করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সরকারপক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে জমি যদি বিনিয়োগকর্তারা নিজে নিজেই কিনে নেন তবে সরকার সবরকম সাহায্য করবে।