উলটোপালটা কথা বলার প্রতিযোগিতা চলছে। মানুষ বোকা হয়ে সেই কথা গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছে। গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ মন্দা নয়। কারণটা অ্যাপ ক্যাব! চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না, তার কারণ চাকরি নেই এমনটা নয়। কারণ চাকরি করার মতো যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না! ‘এক দেশ এক আইন’ ব্যাপারটা সততার সঙ্গে পালন করলে খারাপ কিছু হবেনা। কিন্তু এক দেশে একটাই খাবার! এক দেশে একটাই ভাষা! এক দেশে একটাই পোশাক! এসব শুনতে হচ্ছে। না শুনতে পেলেও শুনতে হবে। এক দেশ একটাই মত। এক দেশ একটাই পথ। এসব শোনার দিন চলে এসেছে। ‘যত মত তত পথ’-এর তত্ত্ব ছেড়ে দেশ এক মতের আর একটাই পথের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

ভাষা বিতর্ক উস্কে দিয়ে তাতে খানিকটা বিভ্রান্তি ফুঁকে দিয়ে দেশের ঐক্য মজবুত করার জন্যে ঘি ঢেলে দেওয়া হয়েছে। মাতৃভাষার আবেগে কাশতে কাশতে, অভিমানের চোরাস্রোতে ভাসতে ভাসতে নৌকা বোঝাই সমস্যা নিয়ে মানুষ নদীর মোহনায় এসে সমুদ্রের ঢেউ গুনছে। কান্ডারি রাতারাতি তার সমাধান করে দিচ্ছে। মাঝরাতে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। রাতারাতি অর্থনীতি পাঁচতলায় চড়ে গেছে। কালোটাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। দুর্নীতি ঢাকা পড়ে গেছে। এবার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর পেলে সেখানে আর ‘চারডি’ ইন্ডাস্ট্রি হলে আর সমস্যা থাকবেনা দেশে। এসব উলটোপালটা চিন্তা মাথায় এলেই মগজটা আহ্লাদে নাচতে শুরু করে দিচ্ছে।

এই মঞ্চে আমরা সবাই নাচনদার আর বাজনদার। ঢোল করতালে ‘ওম’, ‘ব্রাহ্মণ’, ‘রাম’, ‘তিন তালাক’-এর ধুন। পরিবেশে ‘গোরু’, ‘চোনা’ আর ‘গোবর’-এর গন্ধ। নাওয়া খাওয়া ভুলে দেশপ্রেমের কলার তুলে আমরা নেচে যাচ্ছি। আমরা চতুষ্পদের মতো চার পা ঠুকে নাচছি। আমরা লেজ নাড়িয়ে নাচছি। সাম্বা নাচতে গিয়ে আমরা হাম্বা নাচছি। আমরা কাশ্মীরে নাচছি। আমরা আসামে নাচছি। আমরা চাঁদে গিয়ে নাচছি। আমরা মন্দায় নাচছি।

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে গেলে সব কিছুই উলটো লাগছে। তাই হেঁটমুন্ড ঊর্ধ্বপদ হয়ে দেখছি এবার দেশটাকে। এবার বেশ সোজা সোজা লাগছে সব কিছু। মেরুদন্ড সোজা রাখলে সব কিছুই আঁকাবাঁকা দেখছি। তাই মেরুদন্ড বেঁকিয়ে নিয়ে মানিয়ে নিচ্ছি পরিবেশের সঙ্গে। উলটোপালটা লিখে রেখে গেলাম। যারা সোজা হয়ে পড়বেন তাঁরা মাথামুন্ডু খুঁজে পাবেন না।