৩৭০ ধারা সরিয়ে নিয়ে এবার আমরা সবাই কাশ্মীরে জমি কিনতে পারব। আর ওখানে গিয়ে সরকারি চাকরি করতে পারব। আমার খুব আনন্দ। তাছাড়া ৩৫-এ ধারা সরে গিয়ে ওখানকার মেয়েকে বিয়ে করলে তার পারিবারিক সম্পত্তির ওপর আমার দাবি সুরক্ষিত করতে পারব। যারা কাশ্মীরের হট্টগোলে আনন্দ মশগুল হয়ে লাড্ডু বিলি করছে তাদের মুখেই এই কথাগুলো শুনলাম। তাই চলো কাশ্মীর।

কাশ্মীরের জনতার উন্নতির জন্যে নাকি এই সব করা হচ্ছে। এবার ওখানেও উন্নয়ন পৌঁছে যাবে। ভারতের মূল ভূখন্ডে যেমন উন্নতি হচ্ছে ওখানেও তেমনটি করে দেওয়া যাবে। ঘরে ঘরে শৌচালয় গড়ে দেওয়া যাবে। একটা করে গ্যাস কানেকশান করে দেওয়া যাবে। ওখানে চাকরি বাকরি করা যাবে। ওখানে জমিজমা কিনে আরামে থাকা যাবে। ব্যাবসা বাণিজ্য করা যাবে। ওখানে আর চপ ফুলুরির দোকান খুলতে বাধা থাকলনা। মূল ভূখন্ড থেকে যারা ঘুরতে যাবে তারা এবার চপের স্বাদ পেয়ে যাবে। তাই চলো কাশ্মীর! 

ভারতে এখন উন্নতির জোয়ার এসেছে। জোয়ারের চোটে ভেসে যাচ্ছে অর্থনীতি। ‘বিকাশশীল দেশ’ ট্যাগ সরে গিয়ে ‘নিম্ন মধ্য’ আয়ের দেশ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে ভারতকে। কলকারখানা ধপাধপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকে বিভিন্ন সেক্টরে ঝপাঝপ চাকরি হারাচ্ছে। সদ্য গাড়ি কারখানার চাকরি হারানো এই তালিকায় নতুন সংযোজন। আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম কমে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দার কচকচানি থেকে খানিকটা সরে গিয়ে মনটা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারলে মন্দ হয়না। নরকে বসে স্বর্গের কল্পনা করলে মন্দ হয়না। তাহলে উপায়? চলো কাশ্মীর।

কাশ্মীরিরা গৃহবন্দী। ইন্টারনেট নেই। টিভি নেই। খবরের কাগজ যাচ্ছেনা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দোকানপাট বন্ধ। থমথম করছে সবকিছু। নিস্তব্ধ ওরা। ওরা আমাদের উল্লাস দেখতে পাচ্ছেনা। আমরা ওদের আবেগ অনুভব করতে পারছিনা। রাস্তায় রাস্তায় আধা সামরিক বাহিনীর টহলদারি। জুতোর মশমশ। বন্দুকের ঠকঠক। কাঁটাতার দিয়ে আটকানো রাস্তা। মানুষের গতিবিধির ওপর তাক করা বন্দুকের নল। কাশ্মীরিদের কি অপহরণ করা হয়েছে। কাশ্মীরিদের কি অবিশ্বাস করা হচ্ছে। কাশ্মীরিদের কি ভয় পেয়েছে আমাদের দেশটা! নাকি ওদের ভয় দেখানো হচ্ছে?

কি জানি! আমরা তো মূল ভূখন্ডের বাসিন্দা। আমাদের গোবধেই আনন্দ। আমাদের কাছে দুধ আর ঘোলের স্বাদে কোন তফাৎ নেই। আমরা ঘরে বসেই কাশ্মীর টু কন্যাকুমারী ঘুরে নিই। আমরা এখন সিরিয়ালের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মেরে কাশ্মীর দেখছি। যাবেন নাকি কাশ্মীর? চলুন সবাই মিলে ওখানে একগজ করে জমি কিনি। চলুন না সবাই ঝড় ওঠার আগে ওখানে কবরের মতো একটা করে বাঙ্কার খুঁড়ে রাখি। ঝড় উঠলে মুখ লুকোতে হবে তো উটপাখির মতো।