গোবলয় তার বিস্তার লাভ করেছে। সিঁদ কেটে নয়, রীতিমতো ব্যান্ড বাজাতে বাজাতে বাংলার মাটিতে ঘাঁটি গেড়েছে। অনেকে অনেক রকম তত্ত্ব দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হচ্ছে। কেউ বলছেন, সব সেটিং। কেউ বলছেন, বাংলায় কুস্তি আর দিল্লিতে দোস্তি। কেউ বলছেন, বাপের নামে রামের নাম। কেউ বলছেন, বামের জোরে রামের নাম। কিন্তু এই বাংলায় এখন নতুন সুর উঠেছে, তোমার নাম আমার নাম, জয় হনুমান, জ্যায়সিরাম।

এই বাংলায় হনুমানের এত দাপট ছিলনা। দু চারটে ছিল। বাড়ির ছাদের ফুলবাগানে বসত। মানুষের শব্দ পেলেই পালাত। এখন আর পালাচ্ছে না। ওরা চালাক হয়ে গেছে। ওরা জেনে গেছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গলার শির মোটা করে স্লোগান দিয়ে আর ওদের তাড়ানো যাবে না। ওরা জেনে গেছে, মানুষ দুর্বল হয়ে গেছে। এখন ছাদের সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে মানুষ হাঁপিয়ে পড়ছে। উঠতে পারছেনা। হেঁচে কেশে এক শেষ। হনুমান হাঁচির শব্দ শুনতে পাচ্ছে। দুর্বল মানুষের কাশির খকখকানি শুনে আরো জাঁকিয়ে বসছে ছাদের শখের ফুলবাগানে। মানুষ দুর্বল হয়ে গেলেও বুঝতে পারছে তার বাগান নষ্ট হয়ে গেল। কিছুই করার নেই। হনুমানের পেট ভরলে ওরা চলে যাবে। তখন না হয় আবার নতুন করে বাগান করা যাবে। ইতিহাস বলেছে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। তাই হনুমানও চিরস্থায়ীভাবে ছাদের বাগানের দখল নিতে পারবেনা।

এদিকে হনুমান ছাদ থেকে পাড়ায় নেমেছে। গ্রামে ঢুকে পড়েছে। পাড়ায় পাড়ায় হনুমানের মন্দির গড়ে উঠছে। আগে ছিল শনি মন্দির। শীতলা মন্দির। গ্রামের দিকে মনসা ঠাকুরের মন্দির। এখন শুরু হয়েছে হনুমানের মন্দির। হনুমান শহরে ঢুকেছে। কলেজে ঢুকছে। অফিসে ঢুকছে। কলকারখানায় ঢুকছে। গোবলয়ের বিস্তার হয়ে চলেছে। রামনবমীর অস্ত্রনাচন চলছে। তরোয়াল আর গদা নিয়ে অশুভ শক্তি বিনাশের জন্যে এগিয়ে আসছে রামনবমীর শোভাযাত্রা। এর প্রতিরোধে ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ গানটা বেসুরো হয়ে পড়েছে। এসব নিয়ে বিরোধ আর প্রতিরোধ বেতালা লাগছে। কারণ হনুমান পড়তে পারেনা। 

ঢিলেঢালা ঢলামি ছেড়ে এবার ‘হনুমান তাড়ানোর উপায়’ নামের তিরিশ টাকার চটি বইটা আবার সবাই পড়তে শুরু করেছে। এতে লেখা আছে গণতান্ত্রিক উপায়ে হনুমান কি করে তাড়াতে হয়। এতে লেখা আছে হনুমানকে শিক্ষিত করে তোলার বত্রিশ রকম পদ্ধতি। এতে লেখা আছে হনুমানকে মানুষের মতাদর্শে দীক্ষিত করার সতের রকমের পদ্ধতি। এই বই পড়িয়ে হনুমানের মগজ ধোলাই করতে হবে। হনুমান তাড়ানোর সঠিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বোঝানোর জন্যে আগামী পাঁচ বছরে লাখ লাখ লোক জোগাড় করে হাজার হাজার জনসভা করতে হবে। এতে লেখা আছে হনুমানের দল চলে গেলেই আবার নতুন ভোর আসবে। তার আগে এই গানটাই চলুক। তোমার নাম আমার নাম জ্যায়সিরাম। জয় হনুমান।