কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে গেলে ধমকি চমকি দিতেই হয়। তালিবানি টেকনিক না দেখালে পাবলিক কর্মসংস্কৃতি ব্যাপারটা যে কত সিরিয়াস তা বুঝতে চাইবেনা। দাও ব্যাটাকে অন্ধ করে। দে শালার কান কেটে। শিক্ষক পেঁদিয়ে লাট করে রাখ। দেখি কার ঘাড়ে কটা মাথা। কাজ করবে না মানে। তোর বাপ করবে শালা! এইসব কথাগুলো বলাবলি হচ্ছিল এক টালির চালের ঘরে। আমি দেওয়ালে কান পেতে শুনছিলাম। পাছে কেউ আমাকে দেখে ফেলে তাই নিশ্বাসটাও চেপেচুপে রেখেছি। দেখে নিলেই বিপদ। কান পেতেছি। তাই কানটাই না বেঘোরে খোয়াতে হয়। প্রাণ খোয়ালে ল্যাটা তো সঙ্গে সঙ্গে চুকে যায়। কিন্তু কান! একেই বলে তালিবানি।

তোদের বলে দিলাম, তোরা কেউ শালাদের প্রাণে মারিস না। চোখ গেলে দে। শালার বাচ্চারা দগ্ধে দগ্ধে মরুক। ঠ্যাং ভেঙে দে। সারা জীবন খুঁড়িয়ে চলুক। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ করুক। কানা হয়ে কাজ করুক। কালা হয়ে কাজ করুক। আমাদের দেশে কাজ না করে কেউ বেঁচে থাকতে পারবে না। ধর্মঘট আবার কি! ঘটের মধ্যে যদি ধর্মের চিলতে টাক আস্ত আছে তবে জেনে রাখ কর্মই জীবন। ছুটি দেব আমি। আমি যখন বলব তখনই ছুটি। ওসব কারখানার ভেঁপু আমাকে দেখিও না কেউ। অনেক দেখেছি বাপু। আমি শালা মিলিটারির বাচ্চা। যা বলি তাই করি। 

এর মধ্যেই কেউ একজন বলল, “আমি তো কানের গোঁড়ায় এমন একটা দেব না।” বাকি সবাই হইচই করে উঠল, “খালি হাতে দিও না মামা। শালাদের কানের মধ্যে কাস্তে গোঁজা। এই নাও কাট্টা। এটা মুঙ্গেরি মাল। দিয়ে দাও শালার কানে গুঁজে। পাবলিক যাই বলুক এখন আমরা রাজা। আমাদের রাজত্বে থাকতে হলে মুখ বুজে থাক। দশ বছর চুপ থাক।” অমনি পাশ থেকে কেউ একজন বলল, “না গুরু, দশ বছরটা খুব কম সময়। ওদের বলো এখন থেকে চল্লিশ বছর চুপ থাকতে। বেশি ট্যাঁ ফু করলেই বৃন্দাবন দেখিয়ে দেব।” 

টালির চালের নিচে তালিবানি সভায় লোক ক্রমশ বেড়েই চলল। সবুজ সবুজ জোব্বা পরে মুখে সবুজ রঙ মেখে হাতে ছোরা, বন্দুক গুলি বারুদ নিয়ে লোকের মিছিল এসে জড়ো হচ্ছে টালির বাড়িতে। কানা স্বপন পণ করেছে পৃথিবীর আদ্ধেক পাবলিককে ছোরাবাজিতেই কানা করে দেবে। কালা নিতাই গাঁজার ছিলিম টানতে টানতে এসে হাজির টালির চালে। নিতাইও পৃথিবীর বাকি আদ্ধেক পাবলিককে কালা করে দেবে বলছে। আমি চোখ ট্যারা করে একবার দেখে নিলাম। আরও অনেকে ঢুকছে। আমি কেমন যেন ভয় পেতে শুরু করলাম। কানা স্বপন, কালা নিতাই, ছাতু গদাই, হাতকাটা খোকন সবাই মিলে হেঁকে উঠল, “কর্ম করবি না তো শালা পেট ফাটিয়ে দেব। জিভ ছিঁড়ে নেব। আমরা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়ছি। আমরা কর্মসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়ছি।” 

পাশ থেকে এক ভাইপো বলল, “গুরু, কি বলে ফেললে! এখন আমরা কর্মসংস্কৃতির পক্ষে লড়ছি। তুমি বিরুদ্ধে গেলে চলবে!” খোকন কোমর থেকে কি একটা বের করল, “কি বললি আমাকে সংস্কৃত শেখাবি? আমার পাঁচ ফুটের মধ্যে আয় তো দেখি।” 

তালিবানিদের জমায়েত টালির চালের নিচে বাড়ছে। ঘুরে ফিরে হানা দিচ্ছে হুমকি। প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। তালিবানিরা মেতে উঠছে পৈশাচিক হাসিতে। সবুজ জোব্বার ভেতর ভরা আছে হাতবোমা। ছুরি। বন্দুক। আমি স্যাট করে ওখান থেকে সটকে গেলাম। এ যাত্রায় আমার চোখ কান অক্ষুণ্ণ আছে।