যেদিন রাণী ক্ষমতা পেলেন সেদিন লাফিয়ে উঠলেন মেজদার বোনটি। তিনি তাঁর খবরের কাগজে লিখে দিলেন, আজ মেজদা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। রাণীও ফোন করে মেজদার বোনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দিলেন। চোখে জল এল রাণীর। চোখে জল এল মেজদার বোনের। সেদিন আকাশে বাতাসে সবুজের গন্ধ। সেই গন্ধে মাতোয়ারা মেজদার বোনের খবরের কাগজ। তার সঙ্গে আরও দু’চারটি খবরের কাগজ।

একবছরও কাটেনি তারপর। আজ আবার এক তুঘলকি ফরমানের সাক্ষী থাকলেন মেজদার বোন। দেখা যাক সেই বোন কি ভাবে তাঁর খবরের কাগজে ব্যাপারটা হজম করে্ন। সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার ও সরকারি গ্রন্থাগারে কি কি সংবাদপত্র নেওয়া হবে সেই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করল গ্রন্থাগার দফতর। তাতে মেজদার বোনের খবরের কাগজ ঠাঁই পায়নি। আমার সেই দিনটি মনে পড়ে গেল তাই। তাঁরা প্রাক্তন সরকারের ‘অপশাসন’এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েই নাকি সেই সরকারকে উৎখাত করতে আপ্রাণ সাহায্য করেছিলেন। বর্তমান সরকারের সুশাসনের ইঙ্গিত তাঁরা তখনই দিয়ে রেখেছিলেন। আজ বোনের মেজদা থাকলে নিশ্চয়ই খুশি হতেন। 

আটখানা সংবাদপত্রকে গ্রন্থাগারে রাখার জন্যে আদেশ জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে চারটি সংবাদপত্রের কর্তা বা মালিকরা রাণীর দলের রাজ্যসভার সাংসদ। এই সংবাদপত্রগুলি কি লিখবে তা সবাই জানেন। তালিকাভূক্ত সংবাদপত্রগুলি স্বল্প প্রচলিত এবং তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই বললেই চলে। তাই তাদের পাঠক সংখ্যা নগণ্য। রাণী ভজনা করে সেই সব সংবাদপত্রের মালিকরা চাইছেন আখের গুছিয়ে নিতে। তাই তারা গ্রন্থাগারের তুঘলকি নির্দেশিকায় নিজেদের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন। মেজদার বোন আজ খুশি হয়েছেন। কারণ তারা অপশাসন থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন। যারা গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে রেখেছিল তাদের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করতে তাদের সংগ্রাম ছিল। রাণীর হয়ে তাঁরা কথা বলতেন। তাই সেদিন মেজদার বোনের চোখে জলে চলে এসেছিল। রাণীকে মেজদার বোনটি অভিভাবকের সংজ্ঞা দিয়ে ফেলেছিলেন সেদিন। 

আজও তাঁর মেজদার মতোই বোনটি কারণে অকারণে রাণীকে পরামর্শ দিতে ভোলেননি। ঠিক মেজদার মতোই। আবার রাণীর বালখিল্য মন্তব্যকে সমর্থন করতেও ভোলেননা। ঠিক মেজদার মতোই। ‘রাবড়ি প্রসেস’এর রচনা লিখে তিনি রাণীর বালখিল্য আচরণের সমর্থন করেছেন মাস কয়েক আগে। অযাচিত পরামর্শ না দেওয়াই উচিত। কিন্তু তিনি মেজদার অনুকরণ করতে ভালবাসেন। এখন তাঁর মেজদা নেই। দেখা যাক এবার সেই মেজদার বোন তাঁর পরামর্শ ছাড়াও আর কি কি বলেন। তাঁর মেজদা রাণীর সততা নিয়ে নিঃসন্দেহ ছিলেন। অথচ আজ তাঁদের মতো ‘সৎ’ কাগজকে গ্রন্থাগার থেকে বাদ পড়তে হল। তাঁর মেজদা রাণীর সাহস নিয়ে অনেক ‘গল্প’ লিখেছিলেন হয়তো। কিন্তু ভগবান ছাড়া কাউকে ভয় না পাওয়া বহুল প্রচলিত একটি সাহসী কাগজকে রাজ্যের গ্রন্থাগার থেকে বেমালুম বাদ দিয়ে দিলেন মেজদার কল্পনার কান্ডারি। দেখা যাক সেই মেজদার বোন এবার তাঁবেদারি না ভুলে কি ভাবে তোষামুদি করেন! 

তাঁর মেজদা অর্থাৎ সকলের বরুণ সেনগুপ্ত বেঁচে নেই। কিন্তু কাগজটি বেঁচে আছে। কাগজের গুণ এখন বেগুন হয়ে গেছে। তা যাক। রাণীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে আনন্দাশ্রু বিসর্জন করে তাঁবেদারির দৌড়ে কি ভাবে প্রথম স্থান অর্জন করা যায় দেখা যাক। যে সব সংবাদমাধ্যম মানুষকে অপশাসনের হজমিগুলি খাওয়াতে ব্যস্ত থাকত এখন দেখা যাক তারা গ্রন্থাগারে তাদের বরাত না পেয়ে কি কি বলে! যারা গণতন্ত্র নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করতেন এখন দেখা যাক তাঁরা দলতন্ত্র নিয়ে চিন্তিত হন কিনা। 

প্রায় একবছর আগের পালাবদলের দিনই ফোন করে সেই মেজদার বোন রাণীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। দেখা যাক রাণীকে গাছে চড়িয়ে মেজদার বোনটি এইবার মইটি কেড়ে নেন কিনা! দেখা যাক তিনি অপশাসন আর সুশাসনের মধ্যে ফারাক বুঝতে পারেন কিনা! দেখা যাক তিনি রাণীকে আর কি কি পরামর্শ দেন। বোনটির মেজদা বেঁচে থাকলে আজ খুশি হয়ে লিখতেন তাঁর খবরের কাগজ সরকারে বিরুদ্ধে লিখে চলেছে বলেই সরকারি গ্রন্থাগার থেকে তাঁকে ব্রাত্য হতে হল। তিনি হয়ত লিখতেন প্রাক্তন সরকারের সাহস ছিলনা তাই তিনি তখন গ্রন্থাগার থেকে ব্রাত্য হননি। রাণীর অদম্য সাহস। তাই তিনি এমন কাজ করেছেন। রাণী যা করেছেন বেশ করেছেন। পারিবারিক ব্যাপারে অন্য লোকের নাক না গলানোই উচিত।