আমরা বাংলায় বলি মাথা পেয়ালা। মানে কখন কি বলি তার কোন ঠিক ঠিকানা থাকেনা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও মাথা পেয়ালা। তিনি কখন কি বলেন তার কোন ঠিক ঠিকানা থাকেনা। যখন যা খুশি বলে দেন। তিনি ডহরবাবুকে মঞ্চে ডাকেন। তিনি সেন্টিগ্রেড স্কেলে মাটি খোঁড়েন। ২০ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প মাপেন। দেড় কিলো ওজনের বাচ্চাকে স্বাভাবিক ওজনের বাচ্চা বলেন। তিনি বলেন কোন মহাপুরুষের জন্মদিন বছরের যে কোন দিন পালন করা যায়। ভবিষ্যতে কি হতে পারে তা কেউ জানেনা। কিন্তু তিনি জানেন যা ঘটবে তা নন্দঘোষের জন্যেই ঘটবে! মুখ্যমন্ত্রীর পাল্লায় পড়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এখন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা।
পশ্চিমবঙ্গে শিশুমৃত্যু ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কিন্তু তিনি বলেন তিন পারসেন্ট কমিয়ে দিয়েছেন। এত তাড়াতাড়ি ২০১১-র তথ্য বেরিয়ে গেল কি? কে বোঝাবে! শিশুমৃত্যুর হার গোনা হয় হাজারে নাকি শতকে? কে শোনাবে? হাসপাতালে যদি দুঃস্থ শিশু চিকিৎসার জন্যে পৌঁছোয় তবে তাকে বাঁচানোর ভার কি করে রাজ্য সরকারের? আমলাদেরও পোয়া বারো! শিশুমৃত্যুর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবার বললেন সবই নাকি গুজব! কার সাহস আছে বলে দেবে, না এটা গুজব নয়!
কৃষকমৃত্যু ধীরে ধীরে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কৃষকেরা দেনার দায়ে আত্মহত্যা করছে। দিনের পর দিন সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আত্মহত্যা করা নেশার মতো। একজনকে করতে দেখলে একই অসুবিধায় পড়লে অন্যজনও ভাবে বুঝি আত্মহত্যা করলেই ল্যাটা চুকে যাবে। তাই আত্মহত্যা বাড়বে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হেলদোল নেই। তিনি বলেন কৃষকেরা দেনার দায়ে আত্মহত্যা করছেনা। নিজেদের ব্যক্তিগত কারণেই আত্মহত্যা করছে। কে বোঝাবে? আকাট ‘মুখ্যু’কে বোঝানো যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে! নৈব নৈব চ।
এদিকে আমোদপ্রমোদ বেড়ে চলেছে। হরির লুটের মতো টাকা উড়ছে। মহাকরণকে ফাইভ স্টার হোটেল করে ফেলতে হবে। ক্লাববাজি করার জন্যে কোটি কোটি টাকার দানছত্র খুলে বসতে হবে। বিভিন্ন রকম ‘ফেস্টিভাল’ করতে হবে। চোলাই খেয়ে মরলে দু’লাখ টাকা করে দিতে হবে। অথচ অনেকের পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হবে। পরিবহণ কর্মচারীদের মাইনে বন্ধ করে দিতে হবে। চাল কেনার টাকা নেই। রাজ্য রসাতলে নামার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে। আরও ধাপ দুয়েক নামতে পারলেই রসাতল। বলো হরিবোল। মাগো আমায় ঘাটে তোল।
পশ্চিমবঙ্গ আছে খোসমেজাজে। যত দোষ নন্দঘোষ। মন্ত্রীদের কোন দায় দায়িত্ব নেই। আমলাদেরও কোন দায়ভার বহন করতে হচ্ছেনা। আমি কি করি! করে মা কালী। এখন এই রাজ্যের ঘাড়ে বসেছেন মা কালী। যা করার তিনি করবেন। যা বলার তিনি বলবেন। কাউকে কিছু করতে হবেনা। কাউকে কিছু বলতে হবেনা। সবাই মিলে মা কালীর পুজো করে যাও। উনি খুশি হলে আশীর্বাদ দেবেন। সেই আশীর্বাদ মাথায় তুলে পায়ের ওপর পা তুলে আরামকেদারায় বসে থাকো। নেতারা ভোটে জিতেই রাজ্যকে উদ্ধার করে দিয়েছে। বাঘের বাচ্চার লেজের গোড়ায় বসে বসে লেজনাড়ানি দেখছে। কাজ নেই। কর্ম নেই। শুধু হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা বলে নেতারা গলা ফাটাচ্ছে। পরিবর্তনের পাল্লায় পড়ে পাবলিক কাতরাচ্ছে। উন্নয়নের বহর দেখে শিল্প লেজ গুটিয়ে উল্টো দিকে দৌড়োচ্ছে। পেছন পেছন মা কালী। শিল্পীর লেজে টান মারছে। জল দেব। জমি দেব। তোরা একবারটি আয় বাপ। প্রতিশ্রুতির ছয়লাপ।
গুজবে কান দেবেন না। পশ্চিমবঙ্গ এখন ভাল নেই বলে নন্দঘোষ গুজব ছড়াচ্ছে। এই রাজ্য এখন ভালই আছে। দলনেত্রী খুশি মনে হাওয়া খাচ্ছে। নেতারা দোলনায় চেপে দোল খাচ্ছে। নেতাদের বেলচা চামচাগুলো ঘোল খাচ্ছে। আমলারা ঝোল খাচ্ছে। আর পাবলিক খাবি খাচ্ছে। কে বলছে পশ্চিমবঙ্গ গোল্লায় গেল। গুজবে কান দেবেননা। আমি বলছি এই রাজ্য আগের চেয়ে অনেক অনেক ভাল আছে। আপনার মাথা পেয়ালা।